|
Main » 2011 » September » 26 » mlm review
|
মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের
একটি চমৎকার উদাহরণ হিসেবে বলা হয় আপনি একটা পণ্য ব্যবহার করলেন এবং আপনার
ভাল লাগলে সেটা অন্যজনকে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করলেন। যেমন একটা মুভি
আপনার ভাল লাগল। সেটা আপনার বন্ধুকেও দেখতে বললেন। এভাবে পরোক্ষভাবে আপনি
মুভিটির প্রচারণা / অ্যাডভার্টাইজ করলেন কিন্তু ঐ মুভির সংগে জড়িত কেউ
আপনাকে কোন কমিশন দিলনা। কিন্তু মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ে আপনাকে একটা পণ্যর
গুনগত মান অন্যকে প্রচার করলে বিনিময়ে ঐ পণ্যর মালিক আপনাকে একটি
নির্দিষ্ট কমিশন দিবে। এতে আপনারও লাভ এবং পণ্য মালিকের লাভ। কিন্তু আপনাকে
জোর করে যদি একটা নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে বলা হয় এবং ঐ পণ্য ভাল বা খারাপ
যাই হোক জোর করে অন্যকে যদি বলতে বলা হয় পণ্যটি ভাল তবে?
সাধারণ বাজারে (ট্রাডিশনাল মার্কেটিং) যেসকল পণ্য বিক্রি হয় তা
নিত্যব্যবহার্য যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্য থাকার কারণে মানুষ কিনতে পারে,
কিন্তু মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ে এমন সব পণ্য বিক্রি করা হয় যা মানুষের
জন্য কম প্রয়োজনীয়, অর্থ্যাৎ না কিনলেও চলে। যেমন বাংলাদেশের একটি এমএলএম
প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রচলিত নাইজেলা নামক তেলের কথা বলা যায়। ঐ এমএলএম
কোম্পানীতে ডিস্ট্রিবিউটরশীপ পেতে হলে যেকোন একটি পণ্য কিনতে হয়। প্রথমে
নাইজেলা নিয়ে বলছি, ঐ প্যাকেজে নাইজেলা তেল দেয়া হয় ১০ বোতল (২৫০ মিলি:
সম্ভবত)। ৫ বোতল খাওয়ার এবং ৫ বোতল মাখার। ১০ বোতলের দাম নেয়া হয় ৬০০০/
টাকা। প্রতি বোতলের দাম আসে ছয়শত টাকা করে। বাংলাদেশের মত গরীব দেশে ৬০০
টাকা দিয়ে একটা তেলের বোতল কেনার মতও মানুষের লোকের অভাব নেই। কারণ তাকে
ডিস্ট্রিবিউটরশীপ পেতে হবে। আর অপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ডিস্ট্রিবিউটরশীপ হতেও
কিছু সংখ্যক মানুষ রাজী। কারণ ভবিষ্যতে বিরাট অংকের টাকা আয় করার সুযোগ।
দশ বোতল তেলই কিনতে হবে প্রতি বোতল ৬০০ টাকা করে।এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় পন্য
গ্রাহককে কিনতে বাধ্য করা সুস্পষ্ট প্রতারণা । আর মুহাম্মদ (সা) বলেছেন
"যে প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত না "(মুসলিম ও তিরমিযি)
এমএলএম ব্যবসা যারা করেন তাদের একটা যুক্তি অহরহ দিতে শুনি বেকারত্বের
সমস্যা। সরকার এবং প্রাইভেট কোম্পানীগুলো পর্যাপ্ত চাকরী দিতে পারছেনা।
অনেকটা অসহায় হয়েই তারা এমএলএম ব্যবসা শুরু করেছে। আমার কথা হল যে ব্যক্তি
বেকারত্বের জ্বালা বুঝে, সে নিশ্চয়ই টাকার মর্মও বুঝবে। কিভাবে তাহলে সে
৬০০ টাকা শুধু মাত্র একটা খাওয়ার / গায়ে মাখার তেলের পিছনে খরছ করে? তাও
পাক্কা ১০ বোতল একসাথে কিভাবে কিনে? এ কোন ধরনের বিলাসিতা?
২। আরেকটা বহুল প্রচারিত প্রোডাক্ট হল গাছ বা ট্রি প্লান্টেশান। এখানেও
রয়েছে বিশাল ধোকাবাজি। কেউ গাছের চারা কিনে ডিস্ট্রিবিউটর হতে পারে। তবে
এক্ষেত্রে তাকে কিনতে হবে ১৫ টি গাছের চারা। মূল্য ৫০০০/ টাকা। একটা চারা
গাছের মূল্য পড়ে গড়ে ৩৩৩/ টাকা। চিন্তা করে দেখুন নার্সারীতে সাধারণত একটি
গাছের চারা কত হতে পারে? ২০? ৩০? ৪০? ৫০? অথচ মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ে
একটি গাছের চারা কিনতে হচ্ছে তিনশত তেত্রিশ টাকা দিয়ে। তাও আবার ১৫ টা চারা
একসাথে কিনতে হবে। এখানেও জোর করে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে
বড় কথা উক্ত এমএলএম কোম্পানী বনায়ন করে দেশের পরিবেশ রক্ষা করছে বলে মিথ্যা
দাবি করছে। এটাকে কোনমতেই বনায়ন বলা যাবেনা। কারণ এখানে দেশের ও পরিবেশের
স্বার্থ নেই, রয়েছে ব্যবসায়িক স্বার্থ। ১২ বছর পরে ঠিকই গাছগুলো কেটে ফেলা
হবে। এই বনায়ন জিনিসটা একটা ব্যবসায়িক উসিলা মাত্র যেটা দিয়ে ব্যবসায়িক
স্বার্থ হাসিল করা যায়।
৩। আরো কিছু প্রোডাক্ট রয়েছে যেমন ফুট ম্যসেন্জার, হেলথ বড়ি, ইত্যাদি
ইত্যাদি। যেসবের ট্রাডিশনাল মার্কেটের প্রাইস সম্পর্কে গ্রাহকের কোন ধারণাই
নেই। ফলে ইচ্ছামত দাম সেট করে এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। এখানেও গ্রাহককে
অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য (যেটার দাম সম্পর্কে গ্রাহক অজ্ঞাত ) কিনতে বাধ্য করা
হচ্ছে।
মুহাম্মদ (সা) বলেছেন :
"পণ্যের মূল্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নেই এমন লোকের কাছে উচ্চ মূল্যে পণ্য বিক্রি করা নিঃসন্দেহে এক প্রকার জুলম।"
(ইবনে রুশদ, আল কাওয়ায়েদ, পৃষ্ঠা ৬০১)
আর হাজার হাজার টাকা খরচ করে যে ব্যক্তি পা মেসেজ করাতে পারে তার মুখে বেকারত্বের কথা মানায় না।
৪। বর্তমানে নতুন একটি গুজব শুনছি। ২০১২ সালের মধ্য বেকার দূর হবে । সবাই
৫০৪০০/ টাকা করে মাসে ইনকাম করবে। ৫০৪০০ টাকা মাসে ফিক্সড ইনকাম করতে হলে
একটা পজিশনে যেতে হয় যেটার নাম ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ। কথা হচ্ছে ঐ
কোম্পানীতে ওদের ভাষ্যমতে ডিস্ট্রিবিউটর আছে ২৫ লাখ+। কিন্তু বর্তমান
ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ ৪০ এর ভিতরে। মানে ২৫ লাখের মাঝখানে ৪০ জন একটা পজিশনে
যেতে পেরেছে। আর এই ৪০ সংখ্যায় আসতে সময় লেগেছে ৯ বছর। কিভাবে আর ২ বছরের
মধ্য ওরা প্রায় ১ কোটি বেকার দূর করে তাদেরকে ৫০৪০০ টাকা ইনকাম করাবে ? আশা
সেতো মরিচীকা!
৫। ট্রাডিশনাল মার্কেটিং সিস্টেমে পণ্য উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত আসার মাঝখানে বিভিন্ন শ্রেণীর সুবিধাভোগী থাকেন। যেমন
উৎপাদক → এজেন্ট → পাইকার → খুচরা বিক্রেতা → ভোক্তা।
আর মাল্টিলেভেল মার্কেটিং সিস্টেমের নিয়ম অনুযায়ী পণ্য উৎপাদক থেকে সরাসরি
ভোক্তার হাতের নাগালে চলে আসবে। মাঝখানে কোন মধ্যস্থতাকারী থাকতে পারবে না।
এভাবে হলে পণ্যর দামও কমে যাওয়ার কথা। কারণ বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারীর
হস্তক্ষেপে ট্রাডিশনাল মার্কেটিংয়ে দ্রব্যমূল্য যায় যেটা এমএলএমে হওয়ার
সম্ভাবনা নেই। আসলেই কি নেই? তাহলে একটা সাধারণ তেলের বোতলের দাম কেন ৬০০
টাকা হবে? বড়জোর ৩০০ টাকা হতে পারে সর্বোচ্চ। তাহলে বাকী ৩০০ টাকা আমি কাকে
দিলাম? এভাবে পাবলিককে ধোকা দেয়া হচ্ছে।
একটি জিনিস খেয়াল করবেন এমএলএম সিস্টেমে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
বিক্রি করা হয়না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের জানা। তাই
এসব জিনিসপত্রে এভাবে ডাকাতি করা সম্ভবনা। যেমন চাল, ডাল, ময়দা ইত্যাদি।
৬। আমরা বাংলাদেশে একটা রীতি দেখি। সেটা হল ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের রীতি।
বিভিন্ন সরকারকে বছরে বছরে বিভিন্ন প্রজেক্টের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করতে
দেখি কিন্তু সে অনুপাতে প্রজেক্ট গুলোর আলোর মুখ দেখিনা। সেরকম কিছু
প্রজেক্ট বাংলাদেশী একটি এমএলএম কোম্পানীও নিয়েছে এবং বরাবরের মত
ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনেই সীমিত আছে। (কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু জায়গার ছবি
দেখেই সন্তুষ্ট থাকুন)।
টুইন টাওয়ার
শপিং মল
বিভাগীয় কার্যালয়ের জমি
২২ তলা ভবন
ভিত্তি প্রস্থর
সাইনবোর্ড
বড়লোকদের জায়গা
৫০ তলা বিল্ডিং মিরপুরে
৭। আরেকটা পয়েন্ট যেটা মুল পোস্টে দিতে ভুলে গিয়েছি ***
৭। একটি বাংলাদেশী কোম্পানীতে ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ হলে পুরস্কার হিসেবে
দেয়া হয় একটা নোয়াহ গাড়ি। কিছুদিন আগে কোম্পানীটির একজন (রাজীব মিত্র)
ডায়মন্ড হলে সেলিব্রেশন পার্টির আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড
মাঠে। বিশাল আয়োজন। একটি টিভি চ্যানেল (বৈশাখী টিভি) সরাসরি সম্প্রচার করে
অনুষ্ঠান টি।
উপস্থিত অতিথির সংখ্যা ছিল ওদের হিসাবমতে প্রায় ২৫ হাজার। প্রত্যোক অতিথিকে
টিকিট কেটে ঢুকতে হয়েছিল। টিকিটের দাম কত হতে পারে আন্দাজ করুনতো? ৫০০
টাকা। ৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে আরেকজনের সেলিব্রেশনও দেখতে পারেন তথাকথিত
এককালের বেকাররা।
আমার কথা হল অতিথি সংখ্যা যদি ২০ হাজার ধরি এবং টিকিট মূল্য ৫০০ হলে মোট আয়
হয় এক কোটি টাকা। একটা নোয়াহ গাড়ির দাম কত? ২০ লাখ? অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে
সর্বোচ্চ কত খরচ হতে পারে? ৩০ লাখ? বাকি ৫০ লাখ টাকা কই গেল?
এরকম ২ নাম্বারি করে প্রতিটা ডায়মন্ডকে একটা নোয়াহ গাড়ি উপহার দেয়া কি কষ্টসাধ্য কিছু?
সবচেয়ে বড় কথা অতিথিদের টিকিটের টাকা দিয়ে আরেকজনকে গাড়ি কিনে দেয়া, অতিথিদের টাকায় আরেকজনের সেলিব্রেশন দেয়া!
সব শেষে বলব, ব্যবসা করবেন বুঝে শুনে বিনিয়োগ করবেন। কোন লোভ করে নয়। কারণ লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
(আমার বন্ধুদের বেশীরভাগই এখন ব্রেন ওয়াশড। আমাদের সার্কেলে একমাত্র
আমিই এখনো এমএলএম করিনা। পোস্টটি সেইসব ব্রেন ওয়াশড বন্ধুদের উৎসর্গ কৃত।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২০
|
Views: 1438 |
Added by: Alamin
| Rating: 0.0/0 |
|
our poll | |
Statistics |
Total online: 1 Guests: 1 Users: 0 |
|